সামসউদ্দীন চৌধুরী কালাম, পঞ্চগড় : ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নামছে ক্রমাগতই। এর প্রভাব পড়ছে প্রকৃতিতে। বিশেষ করে বোরো মৌসুমে ইরি-বোরো ধান আবাদ করতে গভীর নলকূপ বসিয়ে প্রচুর পরিমাণ পানি উত্তোলন করা হয়। এ ক্ষেত্রে সরকার কৃষিকাজে ভূ-উপরিভাগের পানি ব্যবহারের পরামর্শ দিচ্ছে কৃষকদের।
স্বাধীনতা পূর্ব থেকে শুরু করে স্বাধীনতা উত্তর দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে সারাবছর পানির প্রবাহ থাকায় সরকার পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে নদীতে সেচ পাম্প বসিয়ে কৃষকদের জমিতে সেচ সুবিধা দিত। কিন্তু নদীর উৎসমুখে প্রতিবেশী দেশ জলাধার ও বাঁধ নির্মাণ করায় শুষ্ক মৌসুমে নদীর পানি প্রবাহ কমে গিয়ে বালুচরে পরিণত হয়। একে একে বন্ধ হতে থাকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের হালকা সেচ প্রকল্প।
পঞ্চগড় জেলায় বিভিন্ন নদীতে ১৫টি এলএলপি বা হালকা সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে পাম্প বসিয়ে সেচ সুবিধা দেয়া হলেও বর্তমানে চালু রয়েছে মাত্র ৩টি হালকা সেচ পাম্প। এরই মধ্যে একটি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার বেংহারী বনগ্রাম ইউনিয়নের আহমদনগর-৩ সেচ প্রকল্প।
১৯৬৩ সালে ফুলতলা এলাকায় করতোয়া নদীর তীরে ফুলতলা বাজারের পাশে এই প্রকল্পটি কাজ শেষ করে তৎকালীন পাকিস্তান পানি উন্নয়ন বোর্ড। বসানো হয় প্রতিটি ২ কিউসেক পানি উত্তোলন ক্ষমতা সম্পন্ন ৪টি পাম্প। পানি সরবরাহ করার জন্য এক দশমিক ৩০৭ কিলোমিটার পাকা নালা নির্মাণ করা হয়।
এ নিয়ে কথা হয় আহমদনগর-৩ হালকা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা দলের সভাপতি রফিজ উদ্দিনের সাথে। তিনি জানান, খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুমে কৃষকদের সেচ সুবিধা দিতে তখন করতোয়া নদী থেকে পানি তুলে কৃষকদের সেচ সুবিধা দিতে এই প্রকল্পটি হাতে নেয়া হয়।
বর্তমানে বৈদ্যুতিক পাম্পের মাধ্যমে সেচকার্য চালানো হচ্ছে। এতে করে খরচ অনেক কমে গেছে। একসাথে সব মেশিন চালু থাকায় খুব দ্রুত পানি উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে। এতে করে কৃষকরা সময়মতই তাদের জমিতে সেচ দিতে পারছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠাকুরগাঁও এর উপ-প্রধান সম্প্রসারণ অফিসার রফিউল বারী জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্ধ থাকা এলএলপি এবং বাঁধ সংস্কার করে সেচযোগ্য করে গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে। আহমদনগর-৩ সেচ প্রকল্পের আওতাভূক্ত ১৬২ হেক্টর জমির মধ্যে ইতোমধ্যে ১৩০ হেক্টর জমি সেচ সুবিধার আওতায় এসেছে। বাকি জমিগুলোও সেচ সুবিধার আওতায় আনা হবে।
পঞ্চগড় পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আশুতোষ বর্মন জানান, গত অর্থবছরে দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের পাথরাজ সেচ প্রকল্প ও বেংহারী ইউনিয়নের পাম নদী সেচ প্রকল্প পুনরায় চালু করা হয়েছে। এতে করে ওই দুই প্রকল্পের কৃষকরা উপকৃত হচ্ছে। সংস্কার করে বন্ধ থাকা এলএলপিগুলোও পর্যায়ক্রমে চালু করা হবে।
মন্তব্য করুন
খবরের বিষয়বস্তুর সঙ্গে মিল আছে এবং আপত্তিজনক নয়- এমন মন্তব্যই প্রদর্শিত হবে। মন্তব্যগুলো পাঠকের নিজস্ব মতামত, দৈনিক করতোয়া এর দায়ভার নেবে না।